চীনের বেইজিংয়ে তিন দিনের দ্বিপক্ষীয় সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (জুলাই ১০) স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে বুধবার (জুলাই ১০) রাত ১০টা ৫ মিনিটে (বেইজিং সময়) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে বেইজিং ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। গত সোমবার সন্ধ্যায় তিন দিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনের রাজধানী বেইজিং আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সফরের শেষ দিন বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেইজিংয়ের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’-এ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে দুপুরে একই স্থানে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এবং সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুপুরে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে ২১ সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই করে বাংলাদেশ ও চীন। এছাড়া সাতটি ঘোষণাপত্র সই করে দুই দেশ। অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাতে সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের আগে গ্রেট হলে শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয়। তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (জুলাই ০৯) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিয়েনআনমেন স্কয়ারে চীনা বিপ্লবের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এ দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন চাইনিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) চেয়ারম্যান ওয়াং হানিং এবং এশিয়ান অবকাঠামো ও বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন।
মঙ্গলবার সকালে বেইজিংয়ের সাংগ্রি-লা হোটেলে ‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সুবিধা’ শীর্ষক এক সম্মেলনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে সাম্প্রতিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর শেষ আলোচনা করেন।
২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্ব’ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।
সি চিন পিং ও লি কিয়াংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সম্পূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বাণিজ্য ও উন্নয়নে সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো আলোচনায় প্রধান্য পেয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর চতুর্থ চীন সফর (২০১০, ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২৪)। দুই দেশ আগামী বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করবে। গত ২১ থেকে ২২ জুন ভারত সফরের ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই চীন সফর হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে চীন সফর করেন। তিনি মহান নেতা মাও সে–তুং এবং চৌ এনলাইয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
জাতির পিতার চীন সফরের পর তিনি চীনা নেতৃত্ব এবং তাদের নীতির প্রতি তার প্রশংসা প্রতিফলিত করে ‘আমার দেখা নয়া চীন’ শিরোনামের একটি বই লিখেছেন।
বাংলাদেশকে ১৬০০ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেইজিংয়ের গ্রেট হলে চীনের প্রিমিয়ার অব দ্য স্টেট কাউন্সিল লি ছিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ও দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলসহ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন।
এরপর দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে ২১টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন। পাশাপাশি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি শিয়াং বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন আরএমবি (চীনের রাষ্ট্রীয় মুদ্রা এবং এই অঙ্ক টাকার মানে ১৬০০ কোটি টাকার বেশি) সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন।