প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আজকে পৃথিবীটা গ্লোবাল ভিলেজ, একে অপরের ওপর ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, প্রভৃতির ওপর নির্ভরশীল। এগুলো দরজা বন্ধ করে থাকা যায় না।’

তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ট্রান্স-এশিয়া হাইওয়ে, ট্রান্স-এশিয়া রেলের সাথে যুক্ত হতে হবে। আজকে ভারতকে আমরা ট্রানজিট দিলাম কেন? এটা নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া। আমাদের ট্রানজিট তো আছেই। ত্রিপুরা থেকে বাস চলে আসে ঢাকায়, ঢাকা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত যাচ্ছে। এতে ক্ষতিটা কী হচ্ছে। বরং আমরা রাস্তার ভাড়া পাচ্ছি। সুবিধা পাচ্ছে আমাদের দেশের মানুষ। অনেকে অর্থ উপার্জনও করছে।’

বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারাবিশ্বের সাথে একটা যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা নেপাল-ভুটানের সাথে ট্রানজিট করেছি ভারতের মধ্য দিয়ে। এটাতো কোনো একটা দেশ না, আঞ্চলিক ট্রানজিট সুবিধা এবং যোগাযোগ সুবিধার জন্য করা হয়েছে। আজকে আমরা নেপাল, ভুটান, ভারত, বাংলাদেশ- এই চারটি দেশ নিয়ে প্রত্যেকটি দেশের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা, ট্রানজিটের ব্যবস্থা। আজকে নেপাল থেকে আমরা জলবিদ্যুৎ কেনা শুরু করতে যাচ্ছি, সেখানে গ্রিড লাইন করা, আমরা সেই চুক্তি করেছি, সেটা আমরা কার্যকরও করছি। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর যে সকল রেলপথ, নৌ-পথ যোগাযোগ বন্ধ ছিল সেগুলো আমরা উন্মুক্ত করে দিচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভুটান থেকে একটি রাস্তা যাচ্ছে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড পর্যন্ত। অথচ সেই রাস্তাটা যাচ্ছে বাংলাদেশকে বাইপাস করে। যে রোড হচ্ছে তা থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন, কেন আমরা বিচ্ছিন্ন থাকব। ভারত চাচ্ছিল ভুটান থেকে এই রাস্তাটা বাংলাদেশ হয়ে, ভারত হয়ে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড যাবে। আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ সব কিছু কত সুবিধা হতো।’

তিনি বলেন, ‘সেটাও খালেদা জিয়া নাকচ করে দিয়েছিল। এই হলো অবস্থা। আমি প্রথমবার সরকারে এসে অনেকবার চেষ্টা করেছি কিন্তু আমরা যুক্ত হতে পারিনি।’

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশকে বিক্রি করে না বরং খালেদা জিয়া, এরশাদ ও জিয়াউর রহমান সেটা করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী তার সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় কিছু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য কোনো কোনো বিরোধী রাজনৈতিক মহলের ভারতের কাছে দেশ বিক্রির অভিযোগের কঠোর সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। কারণ আমাদের গ্যাস আমেরিকান কোম্পানি উত্তোলন করছে, সেই গ্যাস তারা বিক্রি করতে চায় ভারতের কাছে। আমি সেটা আপত্তি করেছিলাম।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের আগে অনেক কিছু হয়। যাই হোক খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হয়ে যায় এবং সেভাবে মুচলেকা দেয়। আমরা ভোট বেশি পেয়েছিলাম কিন্তু সিট আর পেলাম না, সরকার গঠন করতে পারলাম না। কারণ আমি গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি। তো বিক্রিটা করে কে দেশকে। করে গেছে তো খালেদা জিয়া, করেছে এরশাদ, করেছে জিয়াউর রহমান, এরাই করে গেছে। আওয়ামী লীগ করে না।’ সূত্র : বাসস

ভারত থেকে পাইপ লাইনে তেল নিয়ে আসার কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা আসামের রুমালিগড় থেকে পাইপলাইনে তেল নিয়ে এসেছি। পার্বতীপুর ডিপোতে সেই তেল আসছে। ক্ষতিটা কী হয়েছে। বরং আমরাই কিন্তু সস্তায় কিনতে পারছি। আমাদের দেশের জন্য, ওই অঞ্চলের মানুষের চাহিদা আমরা পূরণ করতে পারি। উত্তরাঞ্চলে কোনো শিল্পায়ন হয়নি, এখন শিল্পায়নে আমরা যেতে পারি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রও আমরা নির্মাণ করেছি।’

খালেদা জিয়া মিয়ানমার থেকে গ্যাস আনার সুযোগ নষ্ট করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কী সমস্যা দেশের জন্য করেছে দেখেন, মিয়ানমারের গ্যাস ফিল্ডের গ্যাস, ভারত, চীন, জাপান চাচ্ছে। এই গ্যাসকে বাংলাদেশের ভেতর থেকে ভারতে নিয়ে যাবে, এই নিয়ে যাওয়ার সময় এই গ্যাস থেকে আমরা একটা ভাগ নেব। তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামসহ ওই এলাকায় আমাদের গ্যাসের কোনো অভাবই হতো না। খালেদা জিয়া সেটা নিতে দেয়নি। কেন দেয়নি?‘

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে সেই গ্যাস নিচ্ছে চীন। আর কোনো দেশ তো নিতে পারছে না। আমরা সরকারে আসার পর কথা বলেছিলাম মিয়ানমারের সাথে, আনতে পারি কিনা। কিন্তু সেটা সম্ভব না। তারা এটা অলরেডি দিয়ে দিয়েছে।’

Leave A Reply

Exit mobile version