দেশের উত্তরাঞ্চলে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় নদ-নদীর পানি আবার বাড়ছে। কোথাও বাঁধ উপচে, কোথাও ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি। সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও শেরপুর জেলায়ও একই অবস্থা। ফলে নদীতীরবর্তী চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে পাঁচ জেলার লক্ষাধিক মানুষ।
কুড়িগ্রাম : ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ সব কটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। বিপত্সীমার ওপর দিয়ে বইছে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। ফলে শতাধিক চর ও দ্বীপচর প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। শতাধিক পরিবার নদীভাঙনে গৃহহীন হয়েছে।
সদর, উলিপুর, নাগেশ্বরী, চিলমারী, রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলার শতাধিক চরের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নিমজ্জিত হয়েছে গ্রামীণ সড়ক ও ফসলের ক্ষেত। রৌমারীতে নৌবন্দর থেকে রৌমারীগামী সড়ক ও পন্টুন প্লাবিত হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে চিলমারী-রৌমারী ফেরি চলাচল। বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার ও গবাদি পশুর খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২৫৫ হেক্টর জমির পাটসহ এ পর্যন্ত ৪৭৫ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে।
গাইবান্ধা : জেলায় সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এর মধ্যে ফুলছড়ি পয়েন্টে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রর পানি বুধবার বিকেলে বিপত্সীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সদর উপজেলার কামারজানী, মোল্লারচর, গিদারি, ঘাগোয়া ও ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী, ফুলছড়ি ও ফজলুপুর এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, কাপাসিয়া ও হরিপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে নতুন করে পানি ঢুকে পড়েছে। শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন।
চরাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অব্যাহত ভাঙনে তোষা পাটসহ নানা ধরনের ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে।
সুনামগঞ্জ : দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। উজান-ভাটিতে বৃষ্টিপাত কমায় কমছে নদীর পানি। তবে পাহাড়ি ঢলের কারণে বিভিন্ন নদ-নদীর উপচানো পানি রাস্তাঘাট প্লাবিত করে ভেঙে দিচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের আবহাওয়া ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে জানানো হয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে। ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢল হলে বন্যার আশঙ্কা আছে।
মৌলভীবাজার : নতুন করে পাঁচটি এলাকায় বাঁধ উপচে নদ-নদীর পানি প্রবেশ করছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তিন লাখের বেশি মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ধলাই নদী ছাড়া মৌলভীবাজারের বাকি সব নদ-নদীর পানি বিপত্সীমার উওর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলার কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় আবারও বন্যার পানি বাড়ছে। এ ছাড়া রাজনগর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার রূপ নিয়েছে।
সদর উপজেলার হামরকোনা এলাকায় কুশিয়ারা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ২০-২৫ ফুট ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ মেরামতের কাজ করছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, জেলাজুড়ে ৯৪টি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলমগ্ন রয়েছে, আর আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে চালু রয়েছে ৬৪টি বিদ্যালয়। মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৮টি বন্যায় প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলুর রহমান।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় হাকালুকি হাওরপারের বিভিন্ন ইউনিয়নের প্লাবিত গ্রামগুলোতে নতুন করে পানি বাড়ছে। সরেজমিনে ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানিতে পৌর শহরের তিনটি ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি ও উপজেলা পরিষদের ভবনের নিচতলায় পানি প্রবেশ করেছে। উপজেলা সড়কও প্রায় দুই ফুট পানির নিচে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পৌর এলাকার ২০ হাজার মানুষ।
শেরপুর : নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার ভোগাই, চেল্লাখালী ও মহারশি নদীতে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা কমেছে। তবে ওই সব নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও শহর রক্ষা বাঁধের পুরনো ভাঙনের অংশগুলো দিয়ে ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চলের অন্তত ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার তিনটি নদীর অন্তত ৩০০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।