প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর ভারত-বাংলাদেশের ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি চুক্তি, ছিটমহল বিনিময় ও তিন বিঘা করিডোর উন্মুক্ত হয়েছে। অথচ খালেদা জিয়া, জেনারেল এরশাদ ও জিয়াউর রহমান কেউ এসব সমস্যার সমাধান করতে পারেননি, করেননি। জাতীয় সংসদ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়কার ভারত সফরে দেশের জন্য কোনো কিছুই আনতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি দেখতে পাচ্ছি কিছু লোক আমার ভারত সফর নিয়ে নানান কথা তুলেছে। ১৯৮১ সালে ছয় বছর পরে দেশে ফিরে আসার পর তখন এই একই কথা শুনতে হয়েছে (ভারতের কাছে দেশ বিক্রি)। এখন জানি না কেন সেই ভাঙা রেকর্ড বাজাতে শুরু করল।

২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারার কারণ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি বলে ভোট বেশি পেলেও ২০০১ সালে সিট বেশি পাইনি। এজন্য সরকার গঠন করতে পারলাম না। কারণ আমি গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি। তো বিক্রিটা করে কে দেশকে? করে গেছে তো খালেদা জিয়া, করেছে এরশাদ সাহেব। করেছে জিয়াউর রহমান। এরাই করে গেছে, আওয়ামী লীগ করে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাজারটাকে ভারতীয় পণ্যের বাজারের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। ৪০টি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশ অধিকার দিয়ে দেয়। ১৯৮০ সালে গ্যাস বিক্রির চুক্তিও করে আসে। ১৯৯২ সালে ভারতে গেল খালেদা জিয়া।

সেখানে যৌথ ইশতেহার ঘোষণার ১১ অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক হারে ভারতে অনুপ্রবেশ করার কথা স্বীকার করে নেয়। তারপরে পুশইন শুরু হয়েছিল। সেখানে আমাদের বহু মানুষ কষ্ট পেয়েছিল। এ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের জন্য আমরা সংসদে দাবিও করেছিলাম, কিন্তু কর্ণপাত করা হয়নি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। এতদিন তো গণতন্ত্র সেনানিবাসে বন্দি ছিল। সারা রাত হতো কারফিউ। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরেই গণতান্ত্রিক অধিকার মানুষের হাতে ফিরে এসেছে। জনগণ আমাদের ভোট দিচ্ছে, আমরা জয়ী হচ্ছি। অত্যাচার-নির্যাতনের কথা শুনি। আমাদের কোনো নেতাকর্মী বাকি ছিল নির্যাতনের হাত থেকে জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে? তিনি বলেন, সবাই কথা বলছে, জনসভা করছে, মিছিল করছে, বক্তৃতা করছে। আমরা রেডিও, টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দিয়েছি বেসরকারিভাবে। ইচ্ছামতো টকশো করছি। আমরা তো কারো মুখ চেপে ধরছি না, গলা চিপেও ধরছি না। যে যা পারছে, বলতে পারে বলুক। আমরা রাষ্ট্র চালাচ্ছি, জনগণের কল্যাণে কাজ করছি।

আমলাদের নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকে অনেক দোষ দেয়। কিন্তু আমি দেখেছি আশ্রয়ণ প্রকল্পের সময়ে যারা একেবারে তরুণ (কর্মকর্তা), তাদের ভেতরে যে আন্তরিকতা, তাদের কাজ করার যে আগ্রহ, সেটা সত্যিই আমাকে আশার আলো দেখায়। সবাই মন-প্রাণ ঢেলে দিয়ে কাজ করেছে। এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এ ধরনের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী তো দরকার। এ ধরনের অফিসার তো আমাদের দরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার হারানোর কিছু নেই। পাওয়ারও কিছু নেই। আমার একটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের অন্ন, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেশকে উন্নত করে দেওয়া। সেটাই আমি করতে চাই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে আমরা কার্যক্রম অব্যাহত রাখব। এজন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই। আমাদের নবযাত্রায় আরো সাফল্য আসুক। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। বাংলাদেশের মানুষ আরো উন্নত সুন্দর জীবন পাবে।

Leave A Reply

Exit mobile version