আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ যে আক্রমণটা বাঙালির ওপর চালায়, সেই আক্রমণকারী একজন কিন্তু জিয়াউর রহমানও। সেটা হলো চট্টগ্রামে। এটাও ভুললে চলবে না। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, `আজ স্বাধীনতার ৫৩ বছর আমরা পার করেছি। এই ৫৩ বছরের মধ্যে ২৯টা বছরই এ জাতির জন্য ছিল দুর্ভাগ্যের বছর।’ যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজকে যেমন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, কেউ বলছে গণতন্ত্রই নাকি নাই। কেউ বলছে বাংলাদেশের মানুষের নাকি কিছুই হয়নি, কোনো উন্নতিই হয়নি। যারা এসব কথা বলে যাচ্ছে, এ ধরনের কিছু কর্মকাণ্ড স্বাধীনতার পরপর আমরা দেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘একটি সদ্য স্বাধীন দেশ, এই দেশটি ছিল পরাধীন। এ দেশের মানুষ ছিল শোষিত-বঞ্চিত। যেখানে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষই দরিদ্রসীমার নিচে বাস করে। পরনে ছিন্ন কাপড়, পেটে ক্ষুধার জ্বালা, বাসস্থান নেই, চিকিৎসা নেই। সেই একটি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে, মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় এনে দেওয়া; একমাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ছিল বলেই সম্ভব।’

ভারতসহ সব মিত্র রাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে কোনো যুদ্ধে যে কোনো বিপ্লবে মিত্র শক্তির সহায়তা প্রয়োজন হয়। কাজেই আমরাও সেই সহায়তা পেয়েছিলাম। আবার পেয়েছি অনেক বড় বড় দেশের বৈরিতা, যারা পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী যখন আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে, গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের সমর্থন দিয়েছিল, অস্ত্র দিয়েছিল, সাহায্য করেছিল। তবে সেসব দেশের নাগরিকদের সহায়তা, তাদের সমর্থন বাংলাদেশ পেয়েছে।

‘আপনারা জানেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর, যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে, সমর্থন দিয়েছে, আমাদের শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা তাদের কিন্তু সম্মাননা দিয়েছি। আমরা বাঙালি, আমরা কৃতজ্ঞ জাতি। আমাদের যদি কেউ সহযোগিতা করে, আমরা তাদের প্রতি সম্মান দেখাতে জানি, আমরা সেটাই প্রমাণ করেছি। বোধ হয় বিশ্বে একমাত্র বাংলাদেশ এভাবে মিত্র শক্তিকে সব ধরনের সম্মান দিয়েছে। আমরা মনে করি, সম্মান দিয়ে আমরাই সম্মানিত হয়েছি,’ যোগ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সাল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ দেশে আমি দেখেছি ইতিহাস বিকৃতির পালা। তার থেকেও দুঃখের বিষয় হলো, একটি সদ্য স্বাধীন দেশ, একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলতে কত সময় লাগে? আমাদের দেশে যুদ্ধ যখন হয়েছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আক্রমণ চালিয়েছে, তখন এ দেশে কিছু দালাল শ্রেণি জুটে গিয়েছিল। যারা শুধু তাদের পাশেই থাকেনি, গণহত্যা, আমাদের মা-বোনদেরকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের অপকর্ম করেছিল, যেন এই যুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষে বিজয় অর্জন না করে। ঠিক স্বাধীনতার পর পর আমরা দেখলাম যে, তাদের সঙ্গে আরও কিছু লোক যুক্ত হয়ে গেল। এমনকি দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, আমাদের সাথে যারা একইসঙ্গে কাজ করেছে, যুদ্ধ করেছে, তাদের মধ্যেও একটি বিভক্তি সৃষ্টি করা হলো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে কিন্তু সময় দেয়নি—শুরু হয়ে গেল সমালোচনা, এটা নাই, ওটা নাই। কেউ এটা চিন্তা করতে চায়নি যে, যুদ্ধরত একটা দেশে কী অবস্থা হতে পারে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকেই দেখি অনেক বড় বড় কথা বলেন। তারা নাকি গণতন্ত্র খুঁজে বেড়ান। ২৫ মার্চ নিয়ে গতকালকেই শুনছিলাম বিএনপির এক নেতা বললেন যে, ২৫ মার্চ নাকি আওয়ামী লীগের সব নেতারা পালিয়ে গিয়েছিল। তাহলে যুদ্ধটা করল কে? বিজয়টা আনল কে? আমি জিজ্ঞাসা করি, এই কথাটা যে বিএনপির এক নেতা বললো, ১৯৭০ এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন সদস্যরাই কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এই সরকার গঠন করে ১৭ এপ্রিল এখন এটা মেহেরপুর, মুজিবনগর; সে সময় ছিল কুষ্টিয়ার একটি মহকুমা। সেই জায়গায় তারা শপথ নিলেন এবং শপথ নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করলেন এই সরকার। যেহেতু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, যে ঘোষণার সাথে সাথে তাকে কিন্তু গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হলো। উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সরকার পরিচালনা করেন। আর সেই সরকারের অধীনেই এ দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের ক্ষেত্রে আজকে যে দলটি আজকে বড় বড় কথা বলে যাচ্ছে যে, ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ সব নাকি পালিয়ে গেল, তাহলে এই সরকার গঠন করে যুদ্ধ পরিচালনা করল, শুধু পরিচালনা না সেখানে যে সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা হলো, বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশকে ভাগ করা হলো এবং একেকটা সেক্টরে যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হলো, সেখানে যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তিনি আহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমান সেখানে দায়িত্ব পায়।’

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান তো সেখানে একটা বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিল জিয়াউর রহমান এ কথা নিশ্চয়ই তাদের ভুলে গেলে চলবে না। এটাও ভুললে চলবে না যে, স্বাধীনতার পর; জিয়াউর রহমান ছিল একটা মেজর। জিয়াউর রহমানের জন্ম হলো কলকাতায়। তার পরিবার, যখন পাকিস্তান-হিন্দুস্তান হয়ে যায়, পাকিস্তানে যখন ফিরে আসে, সে কিন্তু এই পূর্ববঙ্গে আসেনি। তারা গিয়েছিল করাচিতে। জিয়াউর রহমান সেখানেই পড়াশোনা করে। সেখানেই আর্মিতে যোগ দেয়। সেখান থেকে কার্যাদেশ পেয়ে সে পূর্ববঙ্গে এসেছিল দায়িত্ব পালন করতে। সামরিক অফিসার হিসেবে সে এখানে দায়িত্ব পালন করতো কিন্তু তার মনে তো ওই পাকিস্তানটাই রয়ে গেছে। আর তার প্রমাণও আছে।

‘সেই সময় জিয়াউর রহমান যে মেজর থেকে মেজর জেনারেলটা হলো, এ প্রমোশনগুলো একে একে কে দিয়েছে? এটাও তো আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দিয়েছে। এই অকৃতজ্ঞরা সেটাও বোধ হয় ভুলে যায়,’ বলেন শেখ হাসিনা।

স্বাধীনতার ঘোষণার ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ইতিহাসকে পঁচাত্তরের পর তো বিকৃত করা হয়েছে। বিকৃত করে একটা ভিন্ন ইতিহাস সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল একটা মেজর কোন ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে ফুঁক দিলো আর অমনি বাঁশি ফুঁক দিলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল। এইভাবে একটা দেশ স্বাধীন হয় না। তাহলে তো বাংলাদেশে ইতিহাস অন্য রকম হতো। এই ক্ষেত্রে আমি বলবো যে, এই যে ইতিহাস বিকৃত করে এখনো তারা কিন্তু ভাঙা রেকর্ডের মতো বলেই যাচ্ছে। ওদের কখনো আক্কেল ঠিকানা হবে না। আর না হওয়ার কারণও আছে। এখন তারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। এর মধ্যে অনেকেই তো…মুক্তিযুদ্ধে তারা কে ছিল? কোথায় ছিল? আজকে যিনি বলেছেন যে, ২৫ মার্চ সব আওয়ামী লীগ পালিয়ে গিয়েছিল, তার বাবা কে ছিল?’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ৭৪ সালে যে দুর্ভিক্ষ হয়, তখন খাদ্য সচিব ছিল, এই খাদ্য সচিব বেঈমানি করে ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে এই দুর্ভিক্ষ ঘটিয়েছিল। যার পুরস্কার পেয়েছিল জিয়াউর রহমান যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। তাকে উপদেষ্টা বানিয়েছিল মন্ত্রীর মর্যাদায় এই মঈন খানের বাবা, তার নাম হলো মোমিন খান। সে ছিল খাদ্য সচিব। পিএল ফরেটের ওপর আমরা নির্ভরশীল। সেই পিএল ফরেট জাহাজ, নগদ টাকা দিয়ে কেনা জাহাজ। সেই জাহাজ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। খাবার আসতে দেয়নি বাংলাদেশে। দুর্ভিক্ষ ঘটানো হয়েছিল। দুর্ভিক্ষ কিন্তু বাংলাদেশে ছিলই!’

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই দল ক্ষমতায় থাকলেই যে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় তা তো আজ প্রমাণিত সত্য। যখন এই ক্ষমতা দখলকারীরা, অর্থাৎ রেডিও-টেলিভিশনে ঘোষণা দিয়ে আমি রাষ্ট্রপতি হলাম। সেই হলাম পার্টি যখন ক্ষমতায় ছিল এ দেশের মানুষের ভাগ্যে কী ছিল? ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি, সেশন জট, এই তো অবস্থাটা ছিল। আজকে যারা প্রশ্ন করেন, আওয়ামী লীগ কোথায় ছিল? আমি জিজ্ঞেস করি, আপনারা কোথায় ছিলেন? সেটাও একটু বলেন। জবাব দেন।

‘কোথায় ছিল তাও আমি বলি, ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যখন এখানে গণহত্যা শুরু করে, তারা কিন্তু চট্টগ্রামেও হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল। যারা ব্যারিকেড দিচ্ছিল জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে, তাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। আর চট্টগ্রামে সেই সেনাবাহিনীর দায়িত্বে জিয়াউর রহমান ছিল এবং জিয়াউর রহমানও যারা সেই সময় ব্যারিকেড দিয়েছে তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। শুধু তাই না, সোয়াত জাহাজ এসেছে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র নিয়ে, সেই অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। সেখানে এই যে সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও অন্যান্য সাধারণ জনগণ, তারা তাকে পথে আটকায়। তাকে যেতে দেয়নি, বাধা দিয়েছিল এবং সেখান থেকেই ধরে নিয়ে আসে। সেই সময় আমাদের নেতারা; এখন তো অনেকেই বেঁচে নেই! তারা এখনো সেটা স্মরণ করে,’ বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কাজেই পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ যে আক্রমণটা বাঙালির ওপর চালায়, সেই আক্রমণকারী একজন কিন্তু জিয়াউর রহমানও। সেটা হলো চট্টগ্রামে। এটাও ভুললে চলবে না।’

তিনি বলেন, ‘যখন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে সর্বপ্রথম ২৬ মার্চ দুপুর ২টা-আড়াইটার সময় মান্নান সাহেব, চট্টগ্রামের সেক্রেটারি ঘোষণা দেওয়া শুরু করে। একে একে আমাদের যারা নেতা সবাই ঘোষণা পাঠ করে। সে সময় জহুর আহমেদ সাহেব বলেন, আমাদের একজন মিলিটারি লোক দরকার। তাহলে আমরা যে যুদ্ধ করছি, সেই যুদ্ধ যুদ্ধ হবে। তখন মেজর রফিককে বলা হয়, তিনি তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে আটকানোর জন্য অ্যাম্বুস করে বসে আছেন। বলছেন, আমি এখান থেকে নড়লে এই জায়গাটা ওরা দখল করে নেবে। ওই সময় জিয়াউর রহমানকে ধরে আনা হয় এবং তাকে দিয়ে ২৭ তারিখ সন্ধ্যার পরে সে জাতির পিতার পক্ষে ঘোষণাটা দেয়। পাঠ করে। কেউ যদি কিছু বলে, আমরা আওয়ামী লীগ তাকে খাটো করে দেখেনি। জিয়াউর রহমান একজন মেজর, সে যখন বলছে মানুষের মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাবটা আসবে, এই উদ্দেশ্য নিয়েই একজন সামরিক অফিসারকে দিয়ে এই ঘোষণা পাঠ করানো হয়েছিল। সেটাকেই এখন একেবারে ঘোষক হিসেবে; হ্যাঁ, রেডিওর ঘোষক, টেলিভিশনের ঘোষক, আমাদের এই মিটিংয়েরও তো ঘোষক আছে, তাই না? ঘোষক তো সেই ঘোষক। কাজেই এটা নিয়ে বড়াই করার তো কিছু নেই! তারা এটা (নিয়ে) বড়াই করে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমাদের গেরিলারা জেনারেল মঞ্জুর, হায়দার, খালেদ মোশারফসহ যাদের পরিবার, জিয়াউর রহমানের পরিবারগুলো উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া। খালেদা জিয়া চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসে। ঢাকা এসে পুরোনো পল্টনে তার বোনের বাসায় ওঠে। গেরিলারা তাদের সাথে যোগাযোগ করে। এমনকি একটি টাকাও দেয়। যে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য লোক পাঠানো হয়েছে। এ রকম উদ্ধার করা হয়। খালেদ মোশারফের বাড়ি থেকেও তার পরিবারকে উদ্ধার করা হয়েছিল। শুধু একটি মেয়ে যায়নি, বাকি সবাই গিয়েছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া তাদের বলেছিল, আজকে আমি যাব না, আপনারা পরের দিন আসেন। পরের দিন এসে দেখে কেউ নাই। কোথায়? খালেদা জিয়া চলে গেছে ক্যান্টনমেন্টে দুই ছেলেকে নিয়ে। ক্যান্টনমেন্টে দুই ছেলেকে নিয়ে বহাল তবিয়তে সে আছে। প্রশ্নটা হলো, সেখানে যে চলে গেল কীসের ভরসায়? এখানে আমি একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আসলাম বেগ সে সময় সামরিক অফিসার বাংলাদেশে কর্মরত ছিল, পরে পাকিস্তানে বোধ হয় সেনাবাহিনীর প্রধানও হয়েছিল সে। এই আসলাম বেগ একটা চিঠি লিখেছিল জিয়াউর রহমানের কাছে। সেই চিঠিতে জিয়াউর রহমানের কার্যক্রমকে সে সন্তুষ্ট জানিয়েছিল। যে তার কার্যক্রমে সে সন্তুষ্ট, তাকে ভবিষ্যতে আরও কাজ দেওয়া হবে এবং জিয়ার পরিবার—তার স্ত্রী ও দুই ছেলে যে ভালোভাবে আছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সেই কথাটাও চিঠিতে জানিয়েছে। চিঠিটার কপিটা ছিল, পার্লামেন্টেও পাঠ করা হয়েছে। এটা ডকুমেন্ট হিসেবে আছে।’

শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, ‘যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ফেলল, তার বউ ছেলেকে হেফাজতে রেখে দিলো পাকিস্তানিরা আর আসলাম বেগ চিঠিতে জানাল জিয়ার কার্যক্রমে তারা সন্তুষ্ট, কেন সন্তুষ্ট জানেন? যতগুলো সেক্টরে যুদ্ধ হয়েছে, আপনারা হিসাব করে দেখেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সব থেকে বেশি হত্যা করা হয়েছে যেটার দায়িত্বে ছিল জিয়াউর রহমান। সব থেকে বেশি হতাহত ছিল সেখানে।’

‘আরেকটি কথা না বলে পারছি না, দেখলাম বিএনপির এক নেতা চাদর খুলে আগুন দিচ্ছে ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করবে না। এরপর আবার দেখা গেল, কিছু চাদর কিনে এনে পোড়ানো হলো। আচ্ছা শীতকাল তো চলে গেছে এখন আর চাদর পোড়ালে আর কী আসে-যায়। আমার প্রশ্ন, যে নেতারা বলছেন ভারতীয় পণ্য বর্জন করেন, তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে? তাহলে বউদের কাছ থেকে সেই শাড়িগুলো এনে কেন পুড়িয়ে দিচ্ছে না? আপনারা সবাই একটু এই কথাটা বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞাসা করেন,’ বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের বলব, যারা যারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করবেন সবার বাড়িতে গিয়ে তাদের বউরা যেন কোনো মতে কোনো ভারতীয় শাড়ি না পরে; আলমারিতে যে কয়টা শাড়ি আছে সব এনে যেদিন ওই অফিসের সামনে পোড়াবেন সেদিন বিশ্বাস করব যে, আপনারা সত্যিকার ভারতীয় পণ্য বর্জন করলেন। আমাদের দেশে গরম মসলা, পেঁয়াজ, ভারত থেকে আমরা পেয়াজ আমদানি করছি, রসুন-আদা, মিজোরাম থেকে আমরা আদা আনি, মসলাপাতি, আদা ভারত থেকে যা কিছু আসছে, তাদের কারও পাকের ঘরে যেন এই ভারতীয় মসলা দেখা না যায়। তাদের রান্না করে খেতে হবে এইসব মসলা বিহীন। কাজেই এটা তারা খেতে পারবেন কি না সেই জবাবটা তাদের দিতে হবে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনারা রঙ-ঢঙ-সঙ করতে ওস্তাদ, এটা আমরা আগেও দেখেছি। বাস্তব কথায় আসেন, আপনারা এই পণ্যগুলো সত্যিকার বর্জন করছে কি না সেই কথাটাই আমরা জানতে চাই।’

Leave A Reply

Exit mobile version