শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণার কাজে জড়িত মূলহোতাসহ ৮ জন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র্যাব। র্যাব-৫, ৪, ৮, ১০, ১১ ও ১৪-এর যৌথ অভিযানে ঢাকা, জামালপুর, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও ফরিদপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। র্যাব-৫, রাজশাহীর মিডিয়া উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় – গত ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান এলাকায় এক ব্যক্তির (বাদী) ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে অজ্ঞাতনামা মোবাইল নম্বর থেকে ভিকটিমের মেয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের শাখায় কর্মরত মো. মিজানুর রহমান বলে পরিচয় দিয়ে তার মেয়ের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়ায় শিক্ষা উপবৃত্তির ২২ হাজার ৫০০ টাকা এসেছে বলে জানায়। এই টাকা বাদীর অ্যাকাউন্টে চলে যাবে মর্মে একটি ব্যাংকের এটিএম কার্ডের ষোলো ডিজিটের নাম্বার দিতে বললে তিনি তার ষোলো ডিজিটের নাম্বার প্রদান করলে একটি ওটিপি যাবে বলে জানায়। পরবর্তীতে বাদী মোবাইল মেসেজ অপশনে দেখতে পায় অ্যাকাউন্ট থেকে ৪ বারে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় বাদী অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানার মামলা করেন। র্যাব-৫, নগরীর রাজপাড়ায় অভিযান চালিয়ে শিক্ষা উপবৃত্তি টাকা দেওয়ার নাম করে ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণার কাজে জড়িত শামীম হোসেনকে (২৯) গ্রেফতার করে। শামীম টাঙ্গাইল জেলার বাসিন্দা।
গ্রেফতার শামীমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন কোম্পানির সিমকার্ডসহ বেশ কয়েকটি মোবাইল উদ্ধার করে।
এ সময় শামীম জানান, প্রতারণা চক্রের সদস্য ফরিদপুরের মৃত জয়নুদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ জিহাদ (৩৪) বর্তমানে জামালপুরে অবস্থান করছে। পরবর্তীতে আসামি জিহাদকে বিপুল পরিমাণ সিমকার্ডসহ জামালপুর জেলার সদর থানা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামি জানান, গ্রেফতার জিহাদ ও শামীমকে এই চক্রের সদস্য কুমিল্লার কাজী তাজুল ইসলামের ছেলে কাজী সাদ্দাম হোসেন ওরফে আমির হামজা (২৬) কুমিল্লার বিভিন্ন বেনামি রেজিস্ট্রেশনকৃত সিমকার্ড সংগ্রহ করে দেয়। পরবর্তীতে আমির হামজাকে কুমিল্লা জেলার হোমনা থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে, একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিমকার্ড ক্রয়-বিক্রয় কাজে নিয়োজিত গোপালগঞ্জের আবদুল গাজীর ছেলে আহাদ গাজীকে (২৪) নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার জিহাদ ও শামীমের দেওয়া তথ্যে ফরিদপুরের জয়নাল ফকিরের ছেলে ফিরোজ রহমান ওরফে জয়কে (২৬) ঢাকার কাফরুল থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার মোস্তাফিজুরের দেওয়া তথ্যমতে আসামি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানা এলাকা থেকে বাপ্পি মোল্লাকে (২০) গ্রেফতার করা হয়। তিনি ফরিদপুরের খোকন মোল্লার ছেলে।
তাদের দেওয়া তথ্যমতে, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তার মাধ্যমে ফরিদপুরের দেলোয়ার হাওলাদারের ছেলে জাকির হোসেন হাওলাদার (৪৭) ও এবাদত মোল্লার ছেলে উসমান গনি মোল্লাকে (৩৩) জেলার ভাঙ্গা থানা এলাকা হতে আটক করে।
র্যাব-৫, রাজশাহীর অধিনায়ক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, আসামিদের কাছ থেকে সর্বমোট ২৩টি মোবাইল সেট, ৩১০টি সিমকার্ড এবং নগদ তিন লাখ এক হাজার ২৭০ টাকা ও ৯টি ব্যাংক লেনদেন স্লিপ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ, ডিএমপির ডেমরা থানা, ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা, ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট থানার জিডি ও মামলা হয়েছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।