উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আবারও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতে ব্যাংকঋণের সুদহারও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সুদ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীল ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীদের কপালে দুশ্চিন্তার ছাপ পড়ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে চলমান অস্থিরতায় অত্যাবশ্যকীয় নিত্যপণ্য নয়—এমন পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। তাতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতে ধস নেমেছে। এমন পরিস্থিতিতে ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। সুদহার অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা সম্প্রসারণ ও নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনা আপাতত তুলে রাখছেন অনেক উদ্যোক্তা। শুধু সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কৌশলের যৌক্তিকতা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।
গত বছরের জুনেও ব্যাংকঋণের সুদের হার ছিল ৯ শতাংশ। বর্তমানে সেটি বাড়তে বাড়তে ১৪-১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি সপ্তাহে আরেক দফা নীতি সুদহার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এতে আরেক দফা ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়তে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে উদ্যোক্তাদের।
২০২০ সালের এপ্রিলে সরকারের পরামর্শে ব্যাংকঋণের সুদ সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে মেয়াদি আমানতের সুদহারও বেঁধে দেওয়া হয়, সে হার ছিল ৬ শতাংশ। এরপর দীর্ঘদিন ব্যাংক খাতে ঋণ ও আমানতের ক্ষেত্রে সুদহার ৯-৬-এ সীমাবদ্ধ ছিল। উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতি নানা সংকটে পড়লে গত বছরের জুলাইয়ে সুদের হার বাড়তে শুরু করে।
গত আগস্টে আহসান এইচ মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। এরই অংশ হিসেবে গত দুই মাসে দুই দফা নীতি সুদহার বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়ানোর ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ওভারনাইট রেপো সুদহার ১০ শতাংশে উন্নীত হবে। ফলে ঋণসহ সব ধরনের ব্যাংকিং পণ্যের সুদের হার বাড়বে। বাজারে অর্থের সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। বিদায়ী ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। এদিকে চলতি বছরও বিনিয়োগে সুখবর মিলছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ৭১ শতাংশ কম। এমনকি এই সময়ে প্রাথমিক কাঁচামাল আমদানি কমেছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জুলাইয়ে গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল, ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বর তা কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে নেমেছে। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনো ১০ শতাংশের ওপরে।