ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ‘সুপার এইটে’র খেলায় বাংলাদেশ দলের সহ অধিনায়ক ও পেসার তাসকিন আহমেদ সময়মত মাঠে যেতে পারেননি। কারণ, তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুম থেকে উঠতে দেরি করেছেন। তাতে টিম বাস মিস করেছেন এবং মাঠে যেতেও দেরি হয়েছে। একাদশেই সুযোগ হয়নি তাসকিনের। তাসকিনের এই ঘুম কান্ডেই এখন তোলপাড় ক্রিকেটাঙ্গন।
কেন তাসকিন সেদিন একাদশে ছিলেন না? এই ঘটনা জানতে গিয়েই তাসকিনের ঘুম কান্ড সামনে আসে। তাসকিন যদি একাদশে নিশ্চিতই ছিলেন, তাহলে কেন দলের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে তাসকিনকে ঘুম থেকে উঠিয়ে মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়নি? সেই প্রশ্নও উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে সাকিবের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটে একটা নিয়ম আছে যে দলের বাস কারও জন্য অপেক্ষা করে না। যদি কেউ কখনো বাস মিস করে, তারা পরে গাড়ি নিয়ে মাঠে আসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ট্রান্সপোর্টের সাপোর্টটা অনেক কঠিন ছিল। যখন তাসকিন পৌঁছেছিল (মাঠে), টস হওয়ার ৫-১০ মিনিট আগে। স্বাভাবিকভাবে কঠিন ছিল ওই সময় তাকে দলে নেওয়া। তাসকিন পরে এর জন্য দলের সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। দলের সবাইও বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে। অনিচ্ছাকৃত ভুল সবারই হতে পারে। সে–ও এটা স্বীকার করেছে। তারপর ওখানেই এটা শেষ হয়ে গেছে।’
সংবাদমাধ্যমের খবর, দল হোটেল ছাড়ার সময় বারবার ফোন করেও তাসকিনকে পাওয়া যায়নি। তিনি তখন ঘুমাচ্ছিলেন। এ ক্ষেত্রে তাঁকে রুম থেকে ডেকে আনা যেত কি না, এমন এক প্রশ্নে সাকিবের উত্তর, ‘ক্রিকেটে এ রকম রীতি নেই যে কাউকে ঘর থেকে ডেকে আনবে। দল কখনোই কারও জন্য অপেক্ষা করে না। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে এমনও হয়েছে যে খেলোয়াড় দৌড়াচ্ছে, বাসের দরজা লেগে গেছে, বাস চলে যাচ্ছে। দলের বাস কখনো থামে না। একজনের জন্য পুরো দল থেমে থাকে না।’
এ নিয়ে তাসকিন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে লেখেন- ‘আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমি সম্প্রতি অনলাইনে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে সম্প্রতি শেষ হওয়া টি-২০ বিশ্বকাপের একটি ঘটনা নিয়ে অনেক হৈচৈ করা হচ্ছে।
প্রথমত, আমি সবাইকে জানাতে চাই যে বেশিরভাগ সংবাদ এবং তথ্য যা ছড়ানো হচ্ছে তা কেবল গুজব এবং আমি আশা করি ভক্তরা এটি সেইভাবে দেখবেন।
দ্বিতীয়ত, আমি ঘটনাটি সেদিন আসলে কী ঘটেছিল তা পরিষ্কার করতে চাই।
আমি স্বীকার করি যে আমি স্বাভাবিকের চেয়ে পরে উঠেছি এবং এর জন্য আমি ইতিমধ্যে পুরো দল এবং ম্যানেজমেন্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।
আমি সকাল ৮:৩৭ এ উঠেছিলাম এবং ৮:৪৩ এ লবিতে গিয়েছিলাম এবং আমার রাইড প্রস্তুত হওয়ার সাথে সাথে আমি সকাল ৯:০০ এ হোটেল ছেড়েছি। আমি সকাল ৯:৪০ এ স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেছি, ম্যাচ টসের ২০ মিনিট আগে সকাল ১০:০০ এ। আমরা সকাল ১০:১৫ এ জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছিলাম এবং ম্যাচটি সকাল ১০:৩০ এ শুরু হয়েছিল।
এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে এই তথাকথিত ক্রীড়া সাংবাদিকরা গুজবের ভিত্তিতে খবর প্রচার/মুদ্রণ করছে এবং যাচাই না করে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে যা জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন খেলোয়াড় হিসাবে।
যারা আমাকে চেনেন তারা জানেন আমি আমাদের দেশকে কতটা ভালোবাসি এবং বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য কতটা নিবেদিত, উৎসাহী এবং গর্বিত। আমি জানি আমি সময়মতো টিমের বাসে না উঠার একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল করেছি, কিন্তু আমি টসের আগেই স্টেডিয়ামে ছিলাম। আমার চূড়ান্ত দলে নির্বাচিত না হওয়াটা টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত ছিল। যা সঠিক টিম কম্বিনেশন পাওয়ার সাথে সম্পর্কিত এবং এটি আমার টিম বাসে না ওঠার ব্যর্থতার সাথে সম্পর্কিত ছিল না।
তাই, আমি আশা করি মিডিয়া এবং ক্রীড়া সাংবাদিকরা মিথ্যা গল্প লেখার আগে আরও সতর্কতা অবলম্বন করবেন এবং একটি বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করবেন না। এটি কেবল আমাদের খেলোয়াড়দের ক্ষতি করে না বরং আমাদের দেশের সামগ্রিক চিত্রকে ক্ষুণ্ন করে। আমি বিশ্বাস করি আমরা সবাই সৎ এবং পেশাদার সাংবাদিকতা আশা করি যাতে জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে পারি।
ভবিষ্যতে, আমি আইনি ভাবে এই ধরনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো যাতে কেউ আমার ক্রীড়াবিদ বা মানুষ হিসাবে আমার সুনাম বা অখণ্ডতা ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা না করে।
আমার সকল ভক্তদের ধন্যবাদ তাদের অব্যাহত সমর্থনের জন্য।’