দক্ষিণ আফ্রিকাকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ৭ রানে হারিয়েছে ভারত। প্রথম দল হিসেবে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়েছে। রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ম্যাচের নায়ক বিরাট কোহলির ৭৬ রানের অসাধারণ ইনিংসে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে পেরেছে ভারত। বিশ্বকাপ জিতেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন কোহলি। কোহলির এমন সিদ্ধান্তের পর রোহিতও একই পথের পথিক হন।
বিশ্বকাপ জয়ের ম্যাচে ম্যাচসেরা হন কোহলি। ৫৯ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৭৬ রান করে ম্যাচের নায়ক হন। আসল ম্যাচে এসে নিজের জাত চেনান। ম্যাচ সেরা পুরস্কার নেওয়ার সময়ই নিজের অবসরের কথা জানিয়ে দেন।
শুরুতে বলেন, ‘এটা আমার শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।’ একটু পর আরেক প্রশ্নের উত্তর জানাতে গিয়ে নিজের পরিকল্পনা সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিলেন, ‘এটা আমার ভারতের হয়ে শেষ টি-টোয়েন্টি। এখন পরবর্তী প্রজন্মের টি-টোয়েন্টি খেলাকে এগিয়ে নেওয়ার সময়।’
বিরাট কোহলি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে নিজের অবসরের সিদ্ধান্ত এমন মঞ্চে জানালেন যেখানে মিশে আছে গৌরব, সম্মান, ঐশ্বর্য। ভারত দ্বিতীয়বার জিতল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা। ভারতকে জেতালেন বিরাট কোহলি। হাসল তার ব্যাট। ভারত জিতল ফাইনাল।
অথচ ফাইনালের আগে চরম বিপদে ছিলেন কোহলি। আগের ৭ ইনিংসে তার রান ছিল মাত্র ৭৫ রান। বিবর্ণ পারফরম্যান্সের কারণে জায়গা ধরে রাখার অপবাদও যুক্ত হয় তার নামের পাশে। অথচ ফাইনালেই বিরাটের রান ৭৬। দলের হয়ে সর্বোচ্চ। ৫৯ বলে তার খেলা ইনিংসে ভারত ১৭৬ রান সংগ্রহ করে। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা আটকে যায় ১৬৯ রানে। ৭ রানের জয়ে ভারতের ঘরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা।
আরও পড়ুন – রোহিতের নেতৃত্বে কোহলির ব্যাটিং ঝলকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়ল ভারত
বিরাট অবসরে যাবেন এমন ফিসফিসানি আগে থেকে ছিল। তারকা ক্রিকেটার নিজের ব্যক্তিগত জিনিসগুলো আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন। কিন্তু এবার বিশ্বকাপ জেতার পর বড় মঞ্চে ভাগাভাগি করলেন নিজের সিদ্ধান্ত। ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়ে কোহলি বলেছেন, ‘এটা আমার শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আমরা এটা (বিশ্বকাপ) জিততে চেয়েছিলাম। আপনার একটা সময়ে মনে হতে পারে হয়তো এটা আর সম্ভব নয়। কিন্তু তারপরও হয়ে গেল। সৃষ্টিকর্তা পরম করুণাময়। হয় এবার আর নয়তো কখনোই নয়…এইতো।’
‘ভারতের হয়ে এটা আমার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচও। আমরা শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে চেয়েছিলাম। আমার অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট ছিল। আমি ঘটা করে নিজের সিদ্ধান্ত জানাবো বিষয়টা তেমন নয়। যদি আজ হেরেও যেতাম তবুও জানাতাম না। এখন সময় পরবর্তী প্রজন্মকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এগিয়ে নেওয়ার।’
ভারতের জন্য এই শিরোপা কতোটা আরাধ্য ছিল বোঝা গেল কোহলির কণ্ঠে, ‘লম্বা সময় অপেক্ষার পর আমরা এই শিরোপা পেলাম। শুধু এটা নয়, আমরা আইসিসির একটি টুর্নামেন্ট জিতলাম (১১ বছর পর)। রোহিতকে দেখুন, ও নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছে। আমি ষষ্ঠ। এই শিরোপার যোগ্য দাবিদার সে। ঠিক এই মুহূর্তে নিজের আবেগ, অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন। হয় তো কিছু সময় পর নিজে ডুবে যাবো। অসাধারণ একটি দিন গেল। আমি কৃতজ্ঞ। সবাইকে ধন্যবাদ।’
১২৫ টি-টোয়েন্টিতে কোহলির রান ৪১৮৮। ৪৮.৬৯ গড় ও ১৩৭.০৪ স্ট্রাইক রেটে করেছেন এই রান। নামের পাশে আছে ১ সেঞ্চুরি ও ৩৮ ফিফটি। ব্যক্তিগত এই অর্জন ছাপিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মুকুট থাকবে সবার ওপরে। তাইতো শিরোপা জয়ের দিনেই এই ফরম্যাট থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন। সঙ্গে পেয়ে গেলেন অমরত্বের স্বীকৃতি।
ভারতের জার্সিটা যখন কোহলি তুলে রাখার সিদ্ধান্ত জানালেন তখন অনেকে ধরে নিয়েছিলেন রোহিতও একই পথে হাঁটবেন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তেমন কিছুই ঘটেনি।
ডারবানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৭ বিশ্বকাপে অভিষেকের পর ১৭ বছর ভারতের জার্সি পড়ে দাপটের সঙ্গে খেলে বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলে দিলেন রোহিত শর্মা।
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ১৬ মিনিট কাটিয়ে একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন হাসিমুখে। সংবাদ সম্মেলনের শেষদিকে এক সাংবাদিকের অবসর নেওয়ার প্রশ্ন ছুটে গেল রোহিতের দিকে। প্রশ্ন শোনে, খানিকটা মুচকি হেসে চুপ থাকলেন। ৫-৬ সেকেন্ডের নীরবতার পর বলে দিলেন, হ্যা এটিই আমার শেষ ছিল।
ভারতের ক্রিকেটে নিজেকে আর কতদিন দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে রোহিত, ‘এটি আমারও শেষ ম্যাচ ছিল। সত্যি বলতে আমি যখন থেকে খেলা শুরু করি অনেক উপভোগ করেছি। এই ফরম্যাটকে বিদায় বলার সুন্দর সময় আর হতে পারে না। আমি বিশ্বকাপ জিততে চেয়েছিলাম এবং বলতে চাই…।’ দীর্ঘ ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৪২৩১ রান করেছেন। যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।