কথায় আছে, ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পারমানেন্ট। বিরাট কোহলি তা যেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে দেখিয়ে দিলেন। বার্বাডোজের ব্রাইটনের কেনিংটন ওভাল স্টেডিয়ামে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের আগে কিছুই করে দেখাতে পারেননি। আসল ম্যাচে এসে জাত চিনিয়ে দিয়েছেন কোহলি। ৫৯ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৭৬ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে শিরোপাই জিতিয়ে দিয়েছেন। ভারত ৭ রানে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে। ভারত ১৭৬ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৬৯ রানের বেশি করতে দেয়নি। কোহলির ব্যাটিং ঝলকে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে রোহিত শর্মার ভারত। ম্যাচ সেরার পুরস্কারটিও জেতেন কোহলি। টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণাও দিয়ে দেন।
আরও পড়ুন – টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেই কোহলির পর রোহিতেরও অবসর
ভারতের ছুড়ে দেওয়া ১৭৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুতেই ১২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে। এরপর তৃতীয় উইকেটে গিয়ে কুইন্টন ডি কক ও ট্রিস্টান স্টাবস মিলে দলকে ৭০ রানে নিয়ে যান। এমন সময়ে ৩১ রান করা স্টাবসকে আউট করে দেন আক্সার প্যাটেল। এরপর ডি কক ও হেনরিক ক্লাসেন মিলে দলের ভরসা হয়ে ওঠেন। জয়ের আশাও জাগান। তবে দলের ১০৬ রানে গিয়ে আর্শদীপ সিং যখন ৩৯ রান করা ডি কককে আউট করে দেন, তখন বিপদে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এরপরও ডেভিড মিলার থাকায় আশা শেষ হয়ে যায়নি। আবার ক্লাসেনও অসাধারণ ব্যাটিং করতে থাকেন। ৩০ বলে যখন ৩০ রান লাগে, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভরসাও থাকে। ক্লাসেন তো হাফসেঞ্চুরিও করে ফেলেন। দলকে ১৫১ রানেও নিয়ে গিয়ে ক্লাসেন ২৭ বলে ২ চার ও ৫ ছক্কায় ৫২ রান করে আউট হন। তখন দলের জিততে ২৩ বলে ২৬ রান লাগে। যখন জিততে ১৮ বলে ২২ রান লাগে, তখন আসলে ভারতের জয়ের আশা শুরু হয়। শেষ ৩ ওভারেই আসলে বাজিমাত করে ভারত। জাসপ্রিত বুমরাহ এসে ১৮তম ওভারে ২ রান দিয়ে ১ উইকেট শিকার করেন। আর্শদীপ ১৯তম ওভার করতে এসে মাত্র ৪ রান দেন। শেষ ওভারে জিততে যখন ১৬ রান দরকার, হার্দিক পান্ডিয়া প্রথম বলেই ডেভিড মিলারকে (২১) আউট করে দেন। ভারত তখনই জয়ের সুবাতাস পেয়ে যায়। শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬৯ রান করতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে হেরে যায়।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করে ভারত। ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ভারত বিপদে পড়েছিল। এরপরই কোহলি ও আক্সার প্যাটেল মিলে দলের ভরসা হয়ে ওঠেন। দুইজন মিলে চতুর্থ উইকেটে ৭২ রানের জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেন। কোহলি একদিক আগলে রাখেন। অভিজ্ঞতার ঝলক দেখান। আরেকদিকে প্যাটেল ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন। ৩১ বলে ১ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৭ রানের ইনিংস খেলে ১০৬ রানে গিয়ে রান আউট হয়ে যান প্যাটেল।
তখন কোহলি ৪৩ রানে থাকেন। দলও ১৪ ওভারে চলে যায়। এরপর কোহলিও দ্রুত রান তুলতে থাকেন। সাথে যোগ দেন শিবম দুবে। দ্রুতই ১৬ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৭ রান করে ফেলেন দুবে। এরইমধ্যে কোহলিও ১৭তম ওভারের পঞ্চম বলে ১ রান নিয়ে এবারের বিশ্বকাপের প্রথম হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। দলও দ্রুত ১৬৩ রানে পৌছে যায়। এমন সময়ে কোহলি আউট হয়ে যান। দুবেও দলের ১৭৪ রানে গিয়ে আউট হওয়ার পর ইনিংস শেষ হয় ১৭৬ রানে। ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে এই রান স্কোরে ভারত জমা করতেই যেন দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়।
ফাইনালের আগে টুর্নামেন্টজুড়ে ৭৫ রান করেছিলেন কোহলি। একটি হাফসেঞ্চুরিও ছিল না। বাংলাদেশের সাথে ‘সুপার এইটে’ ৩৭ রান করেছিলেন। নাজুক অবস্থা ছিল কোহলির। প্রথম রাউন্ডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ রান করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে কোন রানই করতে পারেননি। ‘সুপার এইটে’ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৪, বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৭ রান করার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও কোন রান করতে পারেননি। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও ৯ রানেই আউট হয়েছেন।
ফাইনালের সংবাদ সম্মেলনে তাই কোহলির ফর্ম ও একাদশে ওপেনিংয়ে খেলানো নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। রোহিত বলেছিলেন, ‘আমরা তার ক্লাস জানি। আপনি যখন ১৫ বছর খেলে ফেলবেন ফর্ম কখনই সমস্যা হবে না। সে সম্ভবত ফাইনালের জন্য এটা (সেরা পারফরম্যান্স) জমিয়ে রেখেছে।’ তাই হলো। রোহিতের আশা পূরণ করলেন কোহলি। নিজেকেও অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন। ভারতকেও ২০০৭ সালের পর আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন করালেন। ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো দ্বিতীয়বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও শিরোপা জিতল ভারত।