টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ইতিহাসে যা কখনো ঘটেনি, তাই এবার ঘটতে যাচ্ছে। প্রথমবারের মতো কোন দল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হতে চলেছে।
ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার বার্বাডোসের ব্রাইটনের কেনিংটন ওভাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮ টায় শুরু হবে শিরোপার লড়াই। যে দলই ফাইনালে জিতবে, তারাই ইতিহাস গড়বে। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হবে। কিন্তু সবার মনে একটিই প্রশ্ন, চ্যাম্পিয়ন হবে কারা?
আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি। এরপরই ফয়সালা হয়ে যাবে। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নতুন চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকাকে স্বাগত জানাবে বিশ্ব, নাকি পুরনো, প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ভারতের হাতেই শিরোপা শোভা পাচ্ছে, তা বরণ করে নেবে?
দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য কষ্টই হয়। দলটি ৫০ কিংবা ২০; কোন বিশ্বকাপেরই ফাইনালে এরআগে খেলেনি। প্রথমবার খেলছে। বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্যতা এখনও হয়নি। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে ৫ বার এবং ২০ ওভারের বিশ্বকাপে ৩ বার সেমিফাইনাল খেলেছে। দুই বিশ্বকাপ মিলিয়ে মোট ৮ বার ফাইনালে ওঠার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। তাতেই তো চোকার্স খেতাব মিলে গিয়েছিল। এবার দাপটের সঙ্গেই ফাইনালে উঠেছে। চোকার্স থেকে মুক্তি মিলেছে। এখন শিরোপা উচিয়ে ধরতে পারে কিনা দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটাররা দেখা যাক।
ভারত সেই দিক থেকে অনেক এগিয়ে। বিশ্বকাপ হিসেব করলে তিনবার শিরোপা ঘরে তুলেছে। দুইবার ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে (১৯৮৩, ২০১১ বিশ্বকাপে) ও একবার ২০ ওভারের বিশ্বকাপে (২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপে) শিরোপা জিতেছে। ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ফাইনালে খেলেছিল। কিন্তু শিরোপা জিততে পারেনি। আর ওয়ানডে বিশ্বকাপে চারবার ফাইনালে খেলে দুইবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
এবার যে দুই দলের মধ্যকার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, তা যেন বোঝাই যাচ্ছে। রোহিত শর্মার ভারত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সব চেষ্টাই করবে। আর এইডেন মার্করামের দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ক্রিকেটাররা তো প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ কোনভাবেই হাতছাড়া করতে চান না। জান প্রাণ বাজি রেখে হলেও যেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রথম সুযোগটিই কাজে লাগিয়ে ফেলতে চাইবেন। ৩২ বছর ক্রিকেটের সাথে থেকে একবারও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় নি, এ যে কী কষ্টের! তা ঘুচাতে চান দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটাররা।
দুই দলই শুরু থেকে ৮ ম্যাচ খেলে ফাইনালে পৌছেছে। অপরাজিত আছে। শেষ ম্যাচটিতে একটি দলকে হারতেই হবে। ভারত অবশ্য শিরোপা ক্ষুধায় আছে। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরেছে। ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতার পর আর কোন আইসিসির আসরে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এবার সেই শিরোপা ভারতের হাতে ধরা দিতেও পারে।
দু’দল দুই গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার এইটে ওঠে। ভারতের গ্রুপটা তুলনামূলক সহজ ছিল। এই গ্রুপে ছিল পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও আয়ারল্যান্ড। এর মধ্যে তাদের সামনে কেবল বাধা হতে পারত পাকিস্তান। কিন্তু সাবেক চ্যাম্পিয়নরা ভারতের বিপক্ষে পেরে ওঠেনি। আর যুক্তরাষ্ট্র ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয় পায় ভারত। কানাডার বিপক্ষে রোহিত শর্মাদের ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। সুপার এইটে রোহিত শর্মারা হারিয়েছেন আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়াকে। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড অসহায় আত্মসমর্পণ করে।
সুপার এইটে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর আগে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বেশির ভাগ ম্যাচই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে জিতেছে এইডেন মার্করামের দল। কিন্তু ভাগ্য তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বারবার। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪ রান এবং নেপালের বিপক্ষে ১ রানে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কাকে ৬ ও নেদারল্যান্ডসকে ৪ উইকেটে হারিয়ে প্রোটিয়ারা ওঠে সুপার এইটে। সেমিতে আফগানদের ৯ উইকেটে উড়িয়ে প্রথম ফাইনাল নিশ্চিত করে।
দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এটি ঐতিহাসিক উপলক্ষ। কারণ ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ছাড়া পুরুষদের আইসিসি টুর্নামেন্টের কোনো ফাইনালেই ওঠেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগে পাঁচটি ওয়ানডে (১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭, ২০১৫, ২০২৩) ও দুই টি২০ (২০০৯, ২০১৪) বিশ্বকাপের সেমিতে খেলেছে তারা। তাই এবারই শিরোপা জেতার উপযুক্ত সময় প্রোটিয়াদের।
২০০৭ সালে প্রথম টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতলেও ২০১১ সালের পর থেকেই শিরোপা খরা চলছে ভারতের। তাদের শেষ আইসিসির শিরোপা ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এর পর থেকে প্রতিবারই কাছে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে তাদের। ২০১৪ সালে টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে এবং ২০১৬ ও ২০২২ সেমিফাইনাল হেরেছে তারা। ২০১৫ ও ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও সেমি থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। গত বছর ঘরের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে অপরাজিত হয়ে ফাইনালে উঠলেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে শিরোপা হাতছাড়া হয় রোহিত শর্মাদের। তাই এবার শিরোপা ছাড়া দ্বিতীয়টি ভাবার সুযোগ নেই ভারতের।
অ্যাকুওয়েদার অনুযায়ী, খেলার সময় আকাশ মেঘলা থাকবে, বৃষ্টি হতে পারে। বার্বাডোজে খেলা শুরু স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে। কিন্তু রাত ৪টা থেকে ৯টার মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রায় ৫০ শতাংশ, যেটি সকাল ১০টা (টসের সময়) ও বেলা ১টার মধ্যে নেমে আসবে ৩০ শতাংশে। খেলাটি শেষ করার জন্য ১৯০ মিনিট অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। বিজয়ী ঘোষণার জন্য উভয় দলকে কমপক্ষে ১০ ওভার ব্যাট করতে হবে। ফাইনালের একটি রিজার্ভ ডে আছে। অতিরিক্ত সময়েও কমপক্ষে ১০ ওভার করে ম্যাচ না হলে ম্যাচটি রোববারে যাবে। তবে শনিবার যেখানে শেষ হয়েছিল, সেখান থেকে শুরু হবে। রিজার্ভ ডে-তে ম্যাচ শুরুর নির্ধারিত সময় বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮ টা।
কোনভাবে যদি রিজার্ভ ডে-তে’ও খেলা না হয়, তাহলে দু’দল যুগ্ম ভাবে ট্রফি জিতবে। তবে ‘টাই’-এর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সুপার ওভার হবে। যদি প্রথম সুপার ওভার ‘টাই’ হয়, তা হলে দ্বিতীয় বার সুপার ওভার হবে। যত ক্ষণ না ম্যাচের নিষ্পত্তি হচ্ছে, তত ক্ষণ সুপার ওভার চলতেই থাকবে।