প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সাহসের সাথে এগিয়ে চলে জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের শক্তি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।’ জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত এক আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব অনেক বাধা, গুলি, বোমা, গ্রেনেড—সবকিছু অতিক্রম করে জনগণের সেবা করতে পারছেন মন্তব্য করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এমন কথা বলেন। সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৭ মে নিজের দেশে ফেরার স্মৃতিচারণা করে সংসদে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের দিনটি আমার জন্য অনন্য দিন। আমি সেদিন শত বাধা অতিক্রম করে ফিরে এসেছিলাম। সেই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনেক উপদেষ্টাও ফোন করে বলেছিলেন, “আপনি আসবেন না। আপনার বাইরে থাকার জন্য যা যা লাগে আমরা করব।”আবার কেউ কেউ আমাকে ধমকও দিয়েছিল। এ কথা বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে ফিরলে বিমানবন্দরেই মেরে ফেলা হবে। আমি বলেছিলাম, আলহামদুলিল্লাহ, বাংলাদেশের মাটিতেই মরব। কিন্তু আমি আসব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সব এয়ারলাইনসকে নিষেধ করা হয়েছিল, যাতে তাঁকে বোর্ডিং পাস দেওয়া না হয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়া করে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে করে লন্ডনে আসেন। সেখানে আসার পর তাঁকে প্লেনে উঠতে দেওয়া হয়নি। সেদিন তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যেভাবে হোক বাংলাদেশে আসবেন।
দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন বলা হয়েছিল, কেউ যাতে বিমানবন্দরে না যায়। এমনকি আমার দলের ভেতর থেকেও…তখন দলের যিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তিনি সবাইকে বলে দিয়েছিলেন, কেউ বিমানবন্দরে গেলে বহিষ্কার করা হবে। কয়েকজনের নাম নির্দিষ্ট করা ছিল, আমাদের নেতা–কর্মী কেউ রাস্তায় থাকতে পারবে না। আমি শুধু মেসেজ দিয়েছিলাম, সকলেই থাকবে, তবে আমরা গেরিলাযুদ্ধ করেছি, সবাই ঘাসের সঙ্গে মিশে থাকবা। আমি প্লেন থেকে না নামা পর্যন্ত তোমরা বের হবে না।’
দেশে ফেরার পরের পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ড্রাইভারকে বলেছিলাম, যেখানে মানুষ আছে, সেখান দিয়ে যাবা। ফ্লাইওভারে উঠবা না। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই পার্টির নেতা–কর্মীদের, সেদিন তারা একদিকে রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেছে, আরেক দিকে আমাদের দলের কিছু লোকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে সংবর্ধনা দিয়েছিল। এটা সংবর্ধনাও শুধু নয়, আমাকে নিরাপত্তাও দিয়েছে। যেন আমাকে কোনো দিকে নিতে না পারে।’
পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংসদ ভবনের একটা…তখন ওটা প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল, সেখানে আমাকে নিয়ে আসে। সমস্ত একেবারে ফাঙ্গাস পড়া। খুবই নোংরা একটা ভবন, সেখানে আমাকে বন্দী করে রাখে।’
ওয়ান-ইলেভেনের সময় বোন রেহানার ভূমিকা তুলে ধরে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন বন্দী ছিলাম, আমার ছোট বোন রেহানা। সে রাজনীতি করে না। সামনে নেই। কিন্তু সে অসাধ্য সাধন করতে পারে। প্রত্যেকটা জেলা-উপজেলার সব নেতা–কর্মীর সাথে যোগাযোগ রেখেছে। ওই লন্ডনে বসেই সে কাজ করেছে।’