ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার খান ইউনিস শহরের একটি হাসপাতালে একটি গণকবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩০০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি বেসরকারি প্রতিরক্ষা বিভাগ এসব তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গত রবিবার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছিল, খান ইউনিস শহরের একটি হাসপাতালে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
খান ইউনিসের বেসরকারি প্রতিরক্ষা বিভাগের পরিচালক কর্নেল ইয়ামেন আবু সুলেমান সিএনএনকে বলেছেন, গত শনিবার নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে একটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছেন তারা। গতকাল সোমবার আরো ৭৩টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ২৮৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বেশ কয়েকটি লাশ হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এদের মধ্যে কাউকে মাঠেই ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের জীবিত কবর দেওয়া হয়েছিল নাকি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তা আমরা এখনও জানি না। বেশিরভাগ লাশই পচে গেছে। রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী একজন জানিয়েছে, অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে জানুয়ারিতে হাসপাতালের মাঠে নিহত পরিবারের সদস্যদের মৃতদেহ কবর দিয়েছিল। খবর সিএনএনের।
ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পর যখন তারা ফিরে আসে তখন তারা দেখতে পায় যে মৃতদেহগুলো উত্তোলন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে একজন ব্যক্তি সিএনএনকে বলেছেন, তিনি এখনও তার ২১ বছর বয়সী ছেলের লাশ খুঁজে পাননি, যাকে জানুয়ারিতে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমি এখনও তাকে খুঁজে পাইনি। আমরা তাকে সেখানে কবর দিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা নতুন করে ভালো একটি কবর বানাতে চেয়েছিলাম।’
এর আগে খান ইউনিস বেসরকারি প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র এবং এই অনুসন্ধান মিশনের প্রধান রায়েদ সাকার সিএনএনকে বলেছিলেন, গত ৭ এপ্রিল ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পর তারা আরও ৪০০ নিখোঁজ মানুষের লাশের সন্ধান করছেন। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছিল, শহরটিতে সামরিক অভিযানের পর ৭ এপ্রিল ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হয়। এরপর মৃতদেহগুলো পাওয়া যায়। গণকবরে থাকা দেহগুলোর অধিকাংশই নারী ও শিশুদের বলে জানিয়েছে তারা।
এ ছাড়া গণমাধ্যমটির মতে, খান ইউনিসের ওপর ইসরায়েলি আক্রমণের পর প্রায় ৫০০ জন নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় একটি মারাত্মক সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। সেই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হয়। হামলার জবাবে ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭৬ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
অঞ্চলটিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলি যুদ্ধ গাজার ৮৫ শতাংশ বাসিন্দাকে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। পাশাপাশি অঞ্চলের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত রয়েছে। জানুয়ারিতে একটি অন্তর্বর্তী রায়ে তাদের গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।